Life Hacksভালোবাসারিভিউ

ভূতের সাথে দেখা। পর্ব – ২ | বাংলা ভুতের গল্প। Bangla Horor Story

 ভূতের সাথে দেখা। বাংলা ভুতের গল্প। 

 

 Bangla Horor Story

  পর্ব – ২

 

র একবার বর্সাকালের রাতে দাদু নালায় বঁড়শীতে মাছ ধরছিল। সঙ্গে দিদিমা আছে। মুলতঃ বর্ষায় আশেপাশে পুকুরগুলো ভেসে গিয়ে যেসব মাছ বেরিয়ে আসে তারাই ঐ নালা দিয়ে যায়। দাদুর বঁড়শীতে প্রচুর শোল মাছ উঠছিল। দাদু সেগুলো বঁড়শী থেকে খুলে দিদিমার হাতে দিচ্ছিল আর দিদিমা সেগুলো একটা বাঁশের টুকরিতে রেখে দিচ্ছিল।

  আশেপাশে কেউ কোথাও নেই। এক সময় দাদু মাছ ধরতে ধরতে হাপিয়ে গেলো। দিদিমাকে বলল, চল বউ আর ধরে কাজ নেই। যা মাছ পেয়েছি, তা দিয়ে আমাদের দুদিন চলে যাবে। এই বলে যেই মাছের টুকরিটা তুলতে গেছে, অমনি দাদু চিৎকার করে উঠলো- ” একি এত কম মাছ কেন?” বলে টুকরির মধ্যে হাত দিয়ে দেখেন মটে তিনটি মাছ। দিদিমা সরল মনে বললেন, “মনে হচ্ছে শোল মাছগুলো লাফ মেরে টুকরির বাইরে বেরিয়ে গেছে। চল, ঘাসের জঙ্গলে খুঁজে দেখি।” দাদু বলল, না বউ, “আমার অন্য সন্দেহ হচ্ছে।” এই বলে দাদু দিদিমার ডান হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে, অন্য হাতে ধরা পাঁচ সেলের টর্চের আলো সামনে শেওড়া গাছের মগডালে ফেললেন। দেখা গেল একটং সিরিঙ্গে, রোগামারকা, খুব বদখত দেখতে, লাল পাড় শাড়ি পড়া স্ত্রীলোক গাছের মগডালে বসে আস্ত শোলমাছ চিবিয়ে খাচ্ছে। সে তার জ্বলন্ত ভাটার মতো চোখ তুলে এমনভাবে দাদুদের দিকে তাকালো যে দিদিমা সেখানেই মূর্ছা গেল। 

সে যাত্রায়ও দাদু পৈতে আর গায়েত্রি মন্ত্রের সাহায্যে মূর্ছিত দিদিমাকে কাঁধে করে বয়ে নিরাপদে বাড়ি পৌছাতে পেরেছিল।

 দাদু মারা যাবার পরও দিদিমা অনেকবার ভূত দেখেছে। কিন্তু দাদুর ট্রেনিং এর জন্যই হোক বা নিজের ব্রাহ্মণ্যীত্বের তেজের জোরেই হোক, ভূত দেখে দিদিমা আর ভয় পেত না। 

এরকবার দিদিমার এক জা কালেরায় ভুগে মারা গেল। সে বুড়ি খুব ধার্মিক ছিল। চণ্ডীপাঠ শুনতে খুব ভালবাসতো। তাই তার শ্রাদ্ধে চণ্ডীপাঠের ব্যবস্থা করা হল। পুরুত ভক্তিভরে বিশুদ্ধ উচ্চারণে চণ্ডীপাঠ করছেন। বাড়ীর মেয়েরা গলায় কাপড় দিয়ে করজোড়ে পাঠ শুনছেন। তারই মধ্যে দিদিমা দেখতে পেল তার মৃত জা মাথায় ঘোমটা দিয়ে দুলে দুলে চণ্ডীপাঠ শুনছে। দিদিমা ভয় তো পেলই না, উল্টে করজেড়ে মৃতা জায়ের উদ্দেশ্যে প্রনাম ঠুকলো। তার জাও নাকি তার দিকে চেয়ে একবার একটু মুচকি হেসেছিল। 

এবার আসল গল্পে আসি। দিদিমার এক ভাইপো ছিল যার নাম আশু। সে খুবেই অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ ছিল। সে পুরোহিতগিরিও করতো আবার লেদ কারখানায় মিস্ত্রির কাজও করত। এছাড়া সে বাড়ী চুনকাম, রঙ করার কাজও করতো। মানে ওর বাঁধাধরা কোন কাজ ছিল না। আমার এই মামাটির একটি শখের যাত্রা ছিল। পয়সা রজগারের জন্য এটিও একটি মাধ্যম ছিল তার কাছে। মামা বায়না নিয়ে দূর দুরান্ত্ররে যাত্রা করতে যেত। মামা শুধুই পৌরানিক পালা নামাতো। মামা নিজেই গোঁফ দাড়ি কামিয়ে মেয়েদের চরিত্রে অভিনয় করতো। মামার যাত্রাদলের সদস্যরা সবাই দিনের বেলায় জীবিকানিরবাহে জন্য কাজকর্ম করতো। তাই তাদের রিহার্সাল চলতো রাতে। 

 একদিন রিহার্সাল চলার সময় একজন অচেনা মানুষ এসে মামার সঙ্গে দেখা করলো। তাদের গ্রামের শামনে শনিবার এক রাতের জন্য মনসামঙ্গল পালা নামাতে হবে। টাকা পয়সা কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু পালা একদম টপ কোয়ালিটির হতে হবে। কারণ মোড়ল, মাতব্বর সহ গ্রামের সবাই ঝেটিয়ে সেই পালা দেখতে আসবে। মওকা বুজে মামা মোটা টাকা চাইল। লোকটা তাতেই রাজি হয়ে গেল আর ফিফটি পারসেন্ট টাকা অগ্রিম দিয়ে পালা বুকিং করলো। ঠিক হল শনিবার মামার দলবল ডোমজুড়ের বেগড়ি হাটে রাত আট্টার সময় দাঁড়াবে। সেখান থেকে ওদের লোক এসে মামা দলকে গ্রামে নিয়ে যাবে।

নির্দিষ্ট দিনে মামার যাত্রাদল পূর্বনির্ধারিত সময়ের একটু আগেই বেগড়ি হাটে পৌঁছে গেল। রাত আট্টার সময় গাড়োয়ান গোছের একটা লোক সেখানে এলো। বিপন্নপাড়ার কাকমারি পন্চাননতলা গ্রাম থেকে তাকে পাঠানো হয়েছে। যাত্রাদলের লোক জনকে নিয়ে যেতে। হাটের বাহিইরে দুটো গরুর গাড়ী অপেক্ষা করছিল। তাতেই পুরো দলটা এটে গেল।। অচিরেই গরুর গাড়ী দুটি পাকা সড়ক ছেড়ে গ্রামের রাস্তা ধরলো।

প্রায় আধ ঘণ্টারও বেশি সময় মিশকালো অন্ধকার চিরে অগ্রসার হবার পর গাড়ীদুটি একটা উন্মুক্ত প্রান্তরে এসে থামলো। একটা বিরাট মাঠ। আশেপাশে কোন বাড়ী নেই। মাঠের মাঝখানে প্রকান্ড সামিয়ানা টাঙ্গানো হয়েছে। তার চারপাশে সারি সারি সত্ররঞ্ছি পাতা হয়েছে দর্শকদের বসার জন্য। বিজলি বাতি নেই। বদলে অনেকগুলো হ্যাজাক জ্বলছে। এখানেই মামাদের পালা করতে হবে। একজনে গ্রাম্য লোক এসে মামাদের সাজঘরে নিয়ে গেলো যেটা আদপে একটা পোড়া পরিত্যক্ত মন্দির একটা চিড় বড় কাচের আয়না, পায়া ভাঙ্গা তিনটে চেয়ার আর একটি তক্তপোশ- এই ছিলো সাজ ঘড়ের আসবাব। মামাদের বলা হলো দু’ঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে নিতে। ঠিক দশটার মধ্যে পালা শুরু হবে, শেষ করতে হবে রাত তিনটার মধ্যে। ইতিমধ্যে এক ছোকরা মামাদের চা,বিস্কুট,তামাক দিয়ে গেলো। নির্দিষ্ট সময় পালা শুরু হল।চারদিকে অন্ধকারে যতদূর চোখ যায়, শুধু মানুষের কালো কালো মাথা। মানুষের যেন ঢল নেমেছে। মঞ্চের কাছাকাছি যে লোকটা শুধু তামাক সেবনই করছে না,

ইতিমধ্যে সে বোধহয় প্রচুর কারণসুধাও পান করেছে। চোখ দুটো টকটকে লাল, মুখটা সবুজ বর্ণ ধারণ করছে। ভালো করে তাকিয়ে লোকটাকে চিনতে পারলো মামা। এ লোকটাই পালা বায়না করতে গেছিল। অর্থাৎ  লোকটা সেই সময় আত্নপরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছিল। এমনিতে মানসা মঙ্গল পালা মামার দলের ঠোঁটস্থ। তার ওপর এত দর্শকদের উপস্থিতি গোটা দলটাকে যেন চার্জড করে দিল।সবাই ফাটিয়ে অভিনয় করল। প্রচুর হাততালি, প্রশংসায় ভরিয়ে দিল সবাই। মা মনসার চরিত্র দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্য স্বয়ং মোড়ল মশাই মামাকে একটা একশ টাকার নোটের মালা পরিয়ে দিলেন। রাতে পৌনে তিনটে নাগাত পালা শেষ হলো মন্দিরের পেছনে পাতা পেড়ে আর্টিস্টদের খাওয়ানো হলো গরম ঢেকিছাটা চালের ভাত, লম্বা বেগুনভাজা, মাছের মাথাদেওয়া ডাল, কাতলা মাছের কালিয়া,চাটনি, পাপড়, দই আর রসগোল্লা। পালার বাকি টাকাটাও দিয়ে দেওয়া হলো, এছাড়া প্রত্যেক আর্টিস্টকে পঞ্চাশ টাকা করে বকশিশ দেওয়া হলো। চৌকি এবং মেঝেতে ঢালাও বিছানা করে দিয়ে তখনকার মতো  গ্রামবাসীরা বিদায় নিল। মামা ও তার দলবল পাচ মিনিটের মধ্যে গভীর নিদ্রায় ঢলে পড়লে। 

হঠাৎ সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল দলের বেহালা  বাদকের চিল চিৎকারে। সবাই দেখলো যে সে ঘরের খুটিটাকে জাপটে ধরে বলির পাঠার মত ঠকঠক করে কাপছে আর তার স্বরে চিৎকার করছে। তাকে কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে অনেকেরই দৃষ্টি  জানলার বাইরে চলে গেল আর তারপরই অনেকগুলো কন্ঠ থেকে বেহালা বাদকের মতোই আর্তচিৎকার বেরিয়ে এল।

  _শীতল আচার্য

পরবর্তী পর্বের জন্য আমাদের ওয়েবসাইট ফলো করুন

  

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button