একটি প্ল্যানচেট এবং আমি | ভূতের গল্প

একটি প্ল্যানচেট এবং আমি
আমি অবিনাশ। পেশায় উকিল, শখের লেখক। বাড়ি আমার শাল মহুয়ার ঝাড়গ্রাম। ঈশ্বরের কৃপায় আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। এই উনচল্লিশ বছর বয়সেই বাড়ি গাড়ি করে নিতে পেরেছি। অকৃতদার আমি। অবসর সময় কাটে পড়াশোনা ও ফেসবুকে সাহিত্যচর্চা করে। আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভূতের গল্প লিখি। কারণ ওই অলৌকিকতা আমায় টানে। পরলোকের জীবন সংক্রান্ত কৌতূহল নিত্যনতুন প্লটের জন্ম দেয়। ফেসবুক জুড়ে উপচে পড়ে লাইক,কমেন্টস এর বন্যা। এক অপার্থিব আনন্দ নিয়ে আবার খুঁজতে বসি নতুন প্লট,নতুন কাহিনী।
ফেসবুকের একটি ভৌতিক সাহিত্যচর্চার গ্রুপে একটি গল্প লিখে রাতে ঘুমোতে যাবো, দেখি মেসেঞ্জারে একটি নতুন মেসেজের উদয় ঘটেছে। সামান্য কৌতূহল নিয়ে খুললাম। জনৈকা মনীমা লিখেছেন, “হাই দাদা, নমস্কার নেবেন। আমি আপনার লেখার নিয়মিত পাঠিকা।” আমার কাছে এই ধরনের মেসেজ আসা নতুন কিছু না। তাই লিখলাম “ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।” ফোন রেখে বাথরুমের দিকে পা বাড়ালাম, মেসেঞ্জারের বিপ শব্দ বাধ্য করলো ফোনটাকে হাতে নিতে। সেই মণীমা। “আপনি ভূত দেখেছেন?” এবার একটু বিরক্ত হয়ে লিখলাম “না। শুভরাত্রি।” বাথরুম থেকে ফিরে এসে দেখি আর একটি মেসেজ। “দেখবেন?”
সত্যি বলতে কি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। কি বলতে চায় মেয়েটা? কিছু না ভেবেই উত্তর দিলাম “অবশ্যই।” ওদিক থেকে রিপ্লাই এলো “ধন্যবাদ।” পরের টেক্সট এর জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু অপরপ্রান্তে এক অদ্ভুত নিরবতা।
আমি কথা বলার জন্য লিখলাম “কিন্তু কি ভাবে?” উত্তর এলো না।
কয়েক মিনিট ফোন নেড়েচেড়ে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল ৮টা বাজে। নিজের অফিসে বসে একটা কেস এর কাগজ দেখছি, এমন সময় মেসেঞ্জারে সেই রহস্যময়ীর মেসেজ ভেসে উঠলো। “হাই, একটু কথা ছিল।” আমার দুই সহকারী এক নতুন মক্কেলের সাথে কথা বলছে। কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও বাধ্য হয়ে লিখলাম “বিজি আছি। রাত 9 টা নাগাদ কথা বলবো।” অপরপ্রান্ত থেকে কোনও রিপ্লাই পেলাম না। কোর্টে আজ বেশি চাপ ছিল না আমার। সন্ধ্যেবেলা অফিসে বসতেও ইচ্ছে করছিল না। আমার সহকারী অতনু কে বলে অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি চলে এলাম। তখন প্রায় রাত ৮ টা বাজে। কাজের মাসি রান্না করে দিয়ে গেছে। আমি শুধু এক কাপ কফি বানিয়ে বসলাম ফোন নিয়ে। কোন একটি গ্রুপে ইভেন্ট চলছে। আমার লেখার কথা। প্লট ভাবাও হয়ে গেছে। কিন্তু আজ লিখতে একদম ইচ্ছে করছে না। কফি শেষ করতে করতে প্রায় ৯টা বেজে গেল। অন্যান্য মেসেজ ঢুকলেও মনীমার কোন মেসেজ আসেনি এখনও। বাইরে একটা কুকুর তারস্বরে চিৎকার করে যাচ্ছে। জানালা বন্ধ করতে যাবো, মেসেঞ্জারের টুং শব্দ কানে এলো। ফোনটা হাতে নিলাম। মনীমার মেসেজ। “আপনি প্ল্যানচেট করতে পারেন?” লিখলাম “না।” “করবেন একদিন আমার সাথে?” ওপার থেকে রিপ্লাই এলো। একটু অবাক হলাম। তাড়াতাড়ি লিখলাম “আপনাকে তো আমি চিনি না।” ১০ সংখ্যার একটা মোবাইল নম্বর ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। নিচে লেখা “কাল সকাল ৮ টায় ফোন করুন।”
থতমত খেয়ে লিখলাম “আজ নয় কেন?” উত্তর এলো “আমি এখন কথা বলতে পারবো না। পার্সোনাল প্রবলেম।” লিখলাম “ওকে।” অপর প্রান্ত অফলাইন হয়ে গেল। মেয়েটির সাথে কথা বলার পরে আমি যেন কিরকম একটা অনুভব করতে লাগলাম। এক অদম্য কৌতূহল তাড়া করে বেড়াতে লাগলো আমায়। সাথে জন্ম নিল অনেকগুলো জিজ্ঞাসা। কে এই মনীমা? হটাৎ আমাকেই বা কেন ভূত দেখাতে চাইছে? কেন সে কাল সকালেই কথা বলবে? চেষ্টা করলাম ঘুমানোর। কিন্তু ঘুম আসছিল না। কাল একটি ভাইটাল কেসের শুনানি আছে। আমার ঘুমের খুব প্রয়োজন। ঘুম না হলে কাল কেসে মনোনিবেশ করতে পারবো না ঠিকঠাক। কিন্তু ঘুমোতে পারছি কই? মাঝে মাঝেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। উঠে জল খেলাম পেট ভর্তি করে।
আরও পড়ুনঃ ভূতের সাথে দেখা
প্ল্যানচেট। আমি পড়েছিলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্ল্যানচেট করতেন। মোহিত চন্দ্র সেনের কন্যা উমা ছিলেন আত্মার মিডিয়াম। প্রশ্ন করতেন কবি আর পরলোক থেকে আসা আত্মা উমার মাধ্যমে উত্তর দিত। দর্শক আসনে থাকতেন নন্দলাল বসু, অবনীন্দ্রনাথ,মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ। প্ল্যানচেট করতেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি তখন জঙ্গিপাড়া দ্বারকানাথ হাই স্কুলের শিক্ষক। প্রেতচর্চা শুরু করলেন তাঁর মৃত স্ত্রী কে আহ্বানের মধ্য দিয়ে। কিছু সঙ্গিসাথীও জুটে গেছিল। এর ফল হয়েছিল কিন্তু খুব খারাপ। চারিদিকে রটে যায় বিষয়টি। বিভূতভূষনের প্রেতচর্চার ভয়ে বিদ্যালয়ে ছাত্র সংখ্যা কমতে আরম্ভ করেছিল। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেষমেশ বিতাড়িত করেছিলেন তাঁকে। কিন্তু প্ল্যানচেট আমি জীবনে করিনি। আমার ক্ষেত্রে খারাপ কিছু হবে না তো! এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেও পারিনি।
এমনিতে আমি ৬টা নাগাদ উঠি। কিন্তু আজ ভোর ভোর ঘুম ভেঙে গেল। ঘড়িতে তখন ৪:৪৫ বাজে। আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু একটু পরে বুঝতে পারলাম যে, আজ আর ঘুম আসবে না। কাজের মাসি আসে সাতটার পর। আমি ফ্রেশ হয়ে ফ্লাক্স থেকে চা গড়িয়ে দুটো বিস্কুট নিয়ে বসলাম। আটটা বাজতে এখনও অনেক বাকি। কি মনে হলো, রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম। মর্নিং ওয়াক এর অভ্যেস আমার কোনও দিনই ছিল না। অল্প হাঁটতেই ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তাই ধীর লয়ে এগাতে লাগলাম রাস্তার বাম দিক ধরে। ঝাড়গ্রাম শহরকে কলকাতার লোকেরা বলে অরণ্য সুন্দরী। পুরো শহরটাই বড় বড় শাল গাছ দিয়ে মোড়া। পুরাতন ঝাড়গ্রাম পেরিয়ে গেলে কলাবনির গভীর জঙ্গল। সকালটা খুব স্নিগ্ধ। ভিড় নেই একদম। কিছু মানুষ বেরিয়েছেন প্রাত:ভ্রমণে। নাম না জানা পাখির ডাক। মনটা ভালো হয়ে গেল। মোড়ের মাথায় চায়ের দোকানে চা খেতে বসেছি, এক অচেনা ভদ্রলোক “আরে, উকীল বাবু যে! তা আজ সকাল সকাল! মর্নিং ওয়াক করছেন বুঝি?”বলে খোশগল্প জুড়ে বসলেন। ঘড়িতে তখন প্রায় ৬:৩০ বাজে। আমি এমনি ব্যস্ততার ভান করে বাড়ির দিকে পা বাড়ালাম।
বাড়ি ফিরে পোশাক পরিবর্তন করেছি সবে, কাজের মাসী এলো। রাতেই ময়দা ঠেসে ফ্রিজের ভেতর রেখেছিল। তাই লুচি ভাজতে সময় বেশি নিল না। লুচি,ঘুগনি,ডিমের পোচ। ব্রেকফাস্ট করে ঘড়ি দেখলাম। ৭:৪২ বাজে। ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসে থাকলাম। এক একটা মিনিট মনে হচ্ছে এক একটা ঘণ্টা। অস্থির হয়ে উঠলাম এক সময়। ৭:৫৭ বাজে, আর তর সইলো না। ডায়াল করলাম মেসেঞ্জারে পাওয়া নম্বরে। একবার রিং হয়ে কেটে গেল। কেউ ধরলো না। কাঁটায় কাঁটায় ৮টা। আবার ডায়াল করতে যাবো তার আগেই বেজে উঠলো আমার ফোন। মনীমার নম্বর। ফোন ধরে বললাম “হ্যালো” ওপার থেকে উত্তর এল
“নমস্কার, অবিনাশ বাবু।” জিজ্ঞাসা করলাম “এটা যে আমারই নম্বর আপনি বুঝলেন কি করে?” উত্তর এলো “আপনি ছাড়া কাউকে আমি সকাল ৮ টায় ফোন করতে বলিনি।” বেশ রহস্যময় উত্তর।
“না বললে কি কেউ ফোন করতে পারে না?” মোবাইল ফোনের ওপার থেকে একটা মৃদু হাসির শব্দ কানে এলো। ভদ্রমহিলা বললেন “আজ কি পারবেন দেখা করতে একবার?” বললাম “আজ? আজ তো আমার কাজ আছে।” উনি বললেন “সন্ধ্যে বেলা হলেও সমস্যা নেই।” বললাম “সন্ধ্যে ৭ টা নাগাদ পারবো।” উনি বললেন “বেশ। তাহলে ডিয়ার পার্কের সামনের রেস্টুরেন্টে আমি অপেক্ষা করবো।” মনে একটা খটকা লাগলো। আমার প্রোফাইলে কোথাও লেখা নেই lives in ঝাড়গ্রাম। তাহলে এই মেয়েটি জানলো কি করে? একি আমার পূর্ব পরিচিত কেউ? আমার সাথে মজা করছে? থাকতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম। “আমি ঝাড়গ্রামে থাকি আপনি জানলেন কি করে?” উত্তর এলো “আপনার পোস্ট করা ছবি গুলো দেখুন। আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।” বুঝতে পারলাম বেশ বুদ্ধিমতী মেয়ে। আমার প্রোফাইল লক করা নেই। ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জায়গার প্রচুর ছবি আপলোড করা আছে আমার প্রোফাইলে। বুঝলাম, সে কথা বলার আগে আমার ঠিকুজি কুষ্টি সব ঘেঁটে নিয়েছে। কি আর করা যাবে! আমি বোকার মত একটু হাসলাম। কথা শেষের পর মনীমার প্রোফাইল খুললাম। লক করা নেই। প্রোফাইলে একটি ছবি আছে। এক অপূর্ব সুন্দরী নারীর ছবি।
সন্ধ্যে সাতটার আগেই পৌঁছে গেলাম অরণ্যকন্যা রেস্টুরেন্টে। পার্ক বন্ধ হয়ে গেছে বিকেল ৪:৩০ মিনিটে। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ভিড়ও সে রকম নেই। রেস্টুরেন্টে ঢুকে দেখলাম দুটো ফ্যামিলি খাওয়ায় ব্যস্ত। চোখ পড়লো কোণের একটি টেবিলের দিকে। এক মহিলা বসে আছেন। ফেসবুক প্রোফাইল খুলে ছবিটি মেলালাম। ছবির চেয়েও বেশি সুন্দরী। কাছে গিয়ে বললাম “নমস্কার। আপনি মনামী তো।” মৃদু হেসে উনি বললেন “বসুন।”
“তা প্ল্যানচেট এর সাথী হিসেবে আমাকে পছন্দ করার কারণটা জানতে পারি?” প্রথম প্রশ্ন আমার। উনি উত্তর দিলেন “আসলে আপনি খুব বোকা বোকা লেখেন তো, তাই?” খুব ইগো তে লাগলো কথাটা। “বোকা মানে কি বলতে চান আপনি?” উনি বিন্দুমাত্র উত্তেজিত না হয়ে একই রকম মৃদু স্বরে বললেন “জানি, আপনি খুব ফেমাস। আপনার ফ্যান ফলোয়ারও প্রচুর। তবে ভূত বা প্রেতলোক সম্পর্কে আপনি বেশি কিছু জানেন না। আপনি যেটা করেন তা হলো মানুষের অনুভূতি তে সুড়সুড়ি দেওয়া। সাধারণ মানুষ ভাবে ইস, এতো আমাদের সাথেও হতে পারতো।” এটা প্রশংসা নাকি বিদ্রুপ ঠিক বুঝতে না পেরে বললাম “আর?” উনি বললেন “এই যে সেদিন আপনি একটা আস্ত কাতলা মাছের ভূত কে পুকুরে নামিয়ে পুকুরের মালিক কে ভয় দেখলেন। এটা কি সম্ভব কোনোদিন? মাছের সাথে আমাদের সম্পর্কই হল খাদ্য খাদকের। পরজগতের অলিখিত নিয়ম জানেন? খাদ্যের প্রেত কখনও খাদক কে বিপদে ফেললে পারে না। খাদক যা করেছে তা প্রয়োজনে। আর পেটের প্রয়োজন পাপ নয়।” ভদ্রমহিলার কথা শুনতে বেশ ভালো লাগছিল। জিজ্ঞাসা করলাম “আপনি এসব জানলেন কোথা থেকে?” গম্ভীর মুখে উনি বললেন “আজ থেকে ১৯ বছর আগে আমার দাদা রহস্যজনক ভাবে মারা যায়। আমি তখন নিতান্তই কিশোরী। বড় হয়ে আমি SPIRIT এর মেম্বার হই। স্পিরিট জানেন তো! প্যারানরমাল রিসার্চ সোসাইটি। আমাদের কলকাতার একটি বিখ্যাত প্রেতচর্চার প্রতিষ্ঠান। আমার উদ্দেশ্য ছিল দাদার আত্মার সাথে কথা বলা। দাদার মৃত্যুর কারণ জানা” ভদ্রমহিলা কথার মাঝে মনে হল একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে ফেললেন। কারণ জিজ্ঞাসা করতে বাধল। ভদ্রমহিলার পুরানো ক্ষত জাগাতে আর ইচ্ছে করলো না। কিন্তু বেশ বুঝতে পারছিলাম, আমি লিখি বটে ভূতের গল্প, কিন্তু উনি প্রেতচর্চায় খুবই অভিজ্ঞ। উনার জ্ঞানের কাছে আমি নিতান্তই শিশু। ছাত্রের মতো তাকিয়ে থাকলাম উনার দিকে। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম উনি চাইছেন প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে। আমিও চাইছিলাম। জিজ্ঞাসা করলাম ” তা অনেকেই তো আমার মতো বোকা বোকা ভূতের গল্প লেখেন। তো বেছে বেছে আমাকেই কেন আপনার পছন্দ হলো?” উনি পাল্টা প্রশ্ন করলেন “ঝাড়গ্রামে আর কজন থাকে?” আমি মুচকি হেসে কফি তে চুমুক দিলাম। উনি জিজ্ঞাসা করলেন “পরের শনিবার রাত ৯ টায় আপনি ফ্রী থাকবেন? ওই দিন অমাবস্যা।” শনিবার এমনি আমার আদালত বন্ধ থাকে। আর রাত ৯ টায় আমি এমনিই ফ্রী থাকি। ফলে সম্মতি দিলাম। উনি বললেন “তাহলে আজ উঠি? রাত হয়ে এলো।” আমি উনাকে এগিয়ে দিতে চাইলাম। উনি সবিনয়ে বললেন “আমার স্কুটার আছে। আপনি বরং সাবধানে যান। আর হ্যাঁ, আমার বাড়ির ঠিকানা আমি ফোনে জানিয়ে দেবো।”
বৃহস্পতি ও শুক্র বার কেটে গেল। আমি তিন থেকে চারবার ফোন করেছি। কিন্তু মনীমা ফোন তুলেননি। ম্যাসেজও করেছি। একটাও seen হয়নি। প্ল্যান বদলে ফেললেন নাকি ভদ্রমহিলা? তাও তো কিছু জানান নি। আমি কিন্তু এতটাও অস্থির ছিলাম না কোন দিন। কিন্তু এই কয়েকদিন কিছুতেই কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি না। আমার সহকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছে মনে হয়। কিন্তু ওরা কিছু বলেনি। শুক্রবার রাতে বসে আছি ব্যালকনি তে, প্রায় ৯টা বাজে, হটাৎ মেসেঞ্জার টুং শব্দ করে উঠলো। আমি হাতে নিয়ে দেখি মনীমার মেসেজ। তাতে লেখা, “অর্ক ভিলা, রঘুনাথ পুর, ঝাড়গ্রাম। কাল ৮টা নাগাদ পৌঁছে যাবেন। বাড়ি চিনতে সমস্যা হলে ফোন করবেন।” আমি লিখলাম “যাক, আপনার সন্ধান পাওয়া গেল অবশেষে। আমি তো ভাবলাম হারিয়েই গেছেন।” একটা স্মাইলিও দিলাম। কিন্তু হায়, এই মেসেজটাও seen হলো না।
এবার সত্যি বলছি মনে একটা খটকা লাগলো। মেয়েটির অন্য কোন প্ল্যান নেই তো? এতটা নির্লিপ্ত কি করে কেউ হতে পারে? দেখা হওয়ার পর থেকে সামান্য সৌজন্য টুকু সে এই কয়েকদিন দেখায় নি। কাল কি আমার যাওয়া ঠিক হবে? আর সবচেয়ে অদ্ভুত ওর এই মেসেজ করার সময়। হয় সকাল ৮টা বা রাত ৯টা। সারাদিন তো on দেখিনা। তাহলে? কে এই রহস্যময়ী? কি চায় সে? এই সব ভাবতে ভাবতেই খেলাম। মশারী টাঙালাম। শুয়ে শুয়ে ভাবছি কাল যাবো কি যাবো না! এমন সময় মনীমার মেসেজ। “Sorry, একটু কাজ করছিলাম।” যতই হোক, পুরুষ মানুষ তো! সন্দেহ সব উড়ে গেল। লিখলাম “ইটস ওকে।” ওদিক থেকে রিপ্লাই এলো “আসলে প্ল্যানচেটের আগে অনেক নিয়মকানুন মানতে হয়। ঘর নিয়ম অনুসারে শুদ্ধ করতে হয়।” বোকার মত লিখলাম “তাই?” উনি লিখলেন “হ্যাঁ। আরো কিছু কাজ আছে। আপনি ঘুমোন, আমি সব সেরে রাখি।”
এক অদ্ভুত মাদকতা ঘিরে ধরেছে আমায়। ছোট বেলা থেকে যা শুধু বই এর পাতায় পড়ে এসেছি তা আজ চাক্ষুষ করতে চলেছি। মাঝে আর মাত্র কয়েকটি ঘণ্টা। উত্তেজনায় শরীর টগবগ করে ফুটছে। সত্যিই কি হয় এমন? নেমে আসে আত্মা পৃথিবীর বুকে? ভয় করবে না তো? এমনিতে আমি প্রচণ্ড সাহসী, কিন্তু প্রেত সান্নিধ্যের অভিজ্ঞতা নেই। আবার শুনেছি প্ল্যানচেটের টেবিলে ভয় পেয়ে অনেকেই নাকি হার্ট এ্যাটাক হয়ে মারা গেছেন। যাই হয়ে যাক। আমি যাবোই। এই পড়ে পাওয়া সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না।রাত জাগলে তেষ্টা বেশি পায়। নাহ্, মনে হয় আজ আর ঘুম আসবে না।
কাল অনেক দেরী হয়েছিল ঘুমোতে। ঘুম ভাঙলো কাজের মাসীর ডাকে। দরজা খুলে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। যখন বিছানা ছাড়লাম তখন প্রায় সাড়ে নটা বাজে। ফোনটা হাতে নিয়েই মেসেঞ্জার খুললাম। মণীমার দুটি মেসেজ । একটাতে লেখা “সুপ্রভাত।” আর একটিতে লেখা “আজ দয়া করে নিরামিষ খাবেন। আর আসার সময় অতি অবশ্যই স্নান করে কাচা পোশাক পরে আসবেন।” আমি প্রতুত্তরে লিখলাম “ধন্যবাদ আপনাকে। আমি ৮ টা নাগাদ পৌঁছে যাবো।”
আরও পড়ুনঃ আমার বাবার সাথে ঘটা একটি সত্য ঘটনা
ঝাড়গ্রাম শহরটা খুব একটা বড় নয়। আরণ্যাবৃত হওয়ায় সন্ধ্যের পরেই রাস্তায় লোকজন কমে যায়। মনীমার নির্দেশ অনুসারে স্নান করে, পরিষ্কার পোশাক পরে গাড়ি স্টার্ট করলাম। রঘুনাথপুর কাছেই। কয়েক মিনিটের রাস্তা। পৌঁছে ফোন করলাম। বাড়ি খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট হলো না। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুললেন মণীমা স্বয়ং। ঘর বেশ গোছানো। জিজ্ঞাসা করলাম “বাড়িতে কে কে থাকেন?” উত্তর এলো “আমি একা।” অবাক হলাম “আপনার ভয় করে না?” উনি হাসলেন। “আমার পরজগতের বন্ধুরা আমায় রক্ষা করে।” সত্যি বলছি, বুকটা ধড়াস করে উঠলো। নীরবতা ভাঙলেন উনি, বললেন “৯ টা বাজতে মিনিট তিরিশ বাকি। চা কফি কিছু নেবেন?” আমি ঘাড় নেড়ে না বললাম। আমায় বসতে বলে মনীমা পাশের ঘরে গেলেন। বসতে বসতে অনুভব করলাম আমি ঠিক একা নই। ঘরে আরো কেউ বা কারা আছে। পায়চারি করছে আমার চারপাশে। নজর রাখছে আমার ওপর। অসাড় হয়ে আসছে আমার হাত পা। বেশ বুঝতে পারছি আমার আর বেরোনোর কোনও পথ নেই।
অনেকক্ষণ পর নিঃশব্দে দরজা খুলে বেরিয়ে এলেন মনীমা। সাদা পোশাকে অনেক বেশি শুভ্র লাগছে উনাকে। সোজা হয়ে সামনে দাঁড়ালেন আমার সামনে। আদেশের কণ্ঠে বললেন “আসুন।” সেই আদেশ অমান্য করার মত শক্তি তখন আমার নেই। মন্ত্রমুগ্ধের মত অনুসরণ করলাম তাঁকে।
এই সেই ঘর। কোনও বৈদ্যুতিক আলো নেই। ঘরের মাঝখানে একটি মোমবাতি জ্বলছে। তাতে না হচ্ছে আলো আর না কাটছে অন্ধকার। ঘরের ঠিক মাঝখানে একটি গোলাকার টেবিল। টেবিলের মাঝে একটি সাদা কাগজের উপর একটি সাদা রঙের কাপ রাখা। আর আছে তিনটি চেয়ার। মনীমা ইশারায় আমায় বসতে বললেন। বসলাম। উনি বললেন, “আজ আমি মিডিয়াম হবো। আপনার যা যা জানার প্রশ্ন করবেন। আত্মা আমার মাধ্যমে উত্তর দেবেন।” আমি কাপের দিকে নির্দেশ করে বললাম “ওটা?” মনীমা বললেন “আত্মা কে ডাকার সময় কাপটিকে ছুঁয়ে থাকতে হবে। এটাই নিয়ম।” বললাম “তা কাকে ডাকবেন?” উনি বললেন “ওটা আপনি আমার উপর ছেড়ে দিন।” আমার উকীল মনে একটু খটকা লাগলো। পুরো বিষয়টা বুজরুকি নয় তো? ডাকবেন উনি, মিডিয়াম হবেন উনি! প্রশ্ন করবো আমি, আত্মা সেজে উত্তর দেবেন উনি। যদি সেরকম কিছু হয়, তো আমার চোখ এড়াবে না। ধরেই ফেলবো ঠিক। তারপর যা করার আমি করবো। আপাতত দেখা যাক ভেবে চুপ করে থাকলাম।
মনীমা আমি দুজনেই চোখ বন্ধ করে আছি। অনুভব করলাম একটা দমকা বয়ে গেল আবদ্ধ এই ঘরে। তাকিয়ে দেখি মনীমা একদম স্থির। কাপটা একটু কেঁপে উঠলো যেন! মোমবাতির আগুনটাও দুলছে। মন শক্ত করে জিজ্ঞাসা করলাম “আপনি কি এসেছেন?” আমাকে চমকে দিয়ে মনীমা পুরুষ কণ্ঠে বলে উঠলেন “বলুন।” জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনার নাম?” উত্তর এলো “আমার ডাকনাম ছিল অর্ক,ওই নামেই ডাকতে পারেন।” অর্ক! মনে পড়ে গেল বাড়ির নাম অর্ক ভিলা। ইনি কি এই বাড়িরই কেউ? জিজ্ঞাসা করলাম “মনীমার সাথে আপনার সম্পর্ক?” বললেন “ও আমার বোন।” আমি বললাম “আপনার ভালো নাম?” জবাব এল “ভবানী প্রসাদ রায়” ছিটকে উঠলাম আমি। আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম মনীমার দিকে। ভবানী প্রসাদ রায়! এও কি সম্ভব? আমার মনের জিজ্ঞাসা কেড়ে নিয়ে উত্তর এলো “সম্ভব অবিনাশ, সম্ভব। মনে আছে তোর? শুধু তোর জন্যেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল আমায়।” আমি করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম “প্লিজ ভাই, ক্ষমা কর।” এতক্ষণে চোখ খুললেন মনীমা। তীব্র নীল সেই চোখ। যেন জ্বলছে! হটাৎ মনীমা চেয়ার থেকে পড়ে গেলেন। উনার শরীর থেকে বেরিয়ে এলো একটি ছায়ামূর্তি। অবিকল সেই ঊনিশ বছর আগের ভবানী। এগিয়ে আসছে আমার দিকে। হিসহিসে গলায় বলে উঠলো “আমার কেস স্টাডি কেন চুরি করেছিলি বল? কতো স্বপ্ন ছিল আমার। কলেজে ফার্স্ট হবো। নিজের পায়ে দাঁড়াবো। বোনের বিয়ে দেবো। সব শেষ হয়ে গেছিল শুধু তোর জন্য।” কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম “ভবানী, আমায় ক্ষমা কর রে! আমিও যে চেয়েছিলাম ফার্স্ট হতে। কিন্তু তুই থাকায় তা সম্ভব ছিল না।” ক্রুদ্ধ গলায় বলে উঠলো ভবানী “তাই প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার আগের দিন তুই আমার খাতা চুরি করেছিলি!” আমি বললাম, “পরীক্ষায় প্রথম না হলে বিশ্বাস স্যার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমায় নিতেন না রে। আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে যেত! কিন্তু প্লিজ তুই বিশ্বাস কর, আমি ভাবতেও পারিনি এই সামান্য কারণে তুই আত্মহত্যা করবি!” একদম আমার কাছে এসে ভবানী বলল, “এক বছর ধরে করা পরিশ্রম কে তুই সামান্য বলছিস? ওই কেস স্টাডি অপরাধী সম্পর্কে আইনের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিতে পারতো, আর তুই বলছিস সামান্য? তোর জায়গায় বা তোর অনেক উপরে থাকতাম আজ আমি। এটা তোর কাছে সামান্য? ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার বোন কে। সে আর পাঁচজনের মতো আমায় ভুলে যায় নি। চাকরী, পরিবার সব ছেড়ে খুঁজে গেছে আমার মৃত্যুর কারণ। সব শিখে প্রেতলোক থেকে মর্ত্যে নিয়ে আসতে পেরেছে আমায়। তার জন্যই আজ আমি তোকে শাস্তি দেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। শাস্তি, শাস্তি তোকে পেতেই হবে অবিনাশ। পৃথিবীতে আমি বেশিক্ষণ থাকতে পারিনা। সকালে কয়েক মিনিট আর রাতে কয়েক মিনিট। বিগত কয়েকদিন ধরে ওই সময় আমি তাকে নির্দেশ দিতাম আর সে তোকে মেসেজ পাঠাতো। চেয়েছিলাম একবার, শুধু একবার তোর মুখামুখি হতে। আমার কাছে কয়েক মিনিটই যথেষ্ট তোকে শেষ করার জন্য।” এগিয়ে আসছে ভবানী। আমার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। মোমবাতির আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি ভবানীর হাতের আঙুল গুলোকে। এগিয়ে আসছে আমার গলার দিকে। আমার আর কোনও উপায় নেই বাঁচার। চোখ বন্ধ করে ফেললাম। হটাৎ একটা দানবীয় চিৎকার ঘরের চার দেওয়ালে ধাক্কা খেতে লাগলো। চোখ খুলে দেখি ভবানীর ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে মনামী। হাতে একটি ধাতব দণ্ড। মনামী যেন সাক্ষাৎ দেবী! ভবানীর চোখ স্থির হয়ে গেছে। মনামী গম্ভীর গলায় বললেন “দাদা, তুমি চলে যাও। তোমাকে কাউকে খুন করতে দিতে পারিনা আমি।” ভবানী বলল “কিন্তু বোন, এর জন্যেই আমাকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। আর তুই বলছিস ছেড়ে দেবো?” মনামী বললেন “অবিনাশ তোর প্রাকটিক্যাল খাতা লুকিয়ে অন্যায় করেছিল। তুই মরে যাস ও কিন্তু চায় নি। ও তোকে মারেওনি। তাই আমিও তোকে খুন করতে দেবো না। তুই যদি না যাস তো আমি আমার শক্তি প্রয়োগ করে তোকে চলে যেতে বাধ্য করবো।” আবার একটা দমকা হাওয়া বয়ে গেল ঘর জুড়ে। সে হাওয়ার এমনই জোর যে নিভে গেল মোমবাতির আগুন। মনামী ঘরের আলো জ্বালাতে আর ভবানীকে দেখতে পেলাম না। মনামী টেবিলের কাছে গিয়ে কাপটি তুলে নিয়ে আছড়ে ভেঙে ফেললেন। টেবিলের নিচে রাখা কাগজের টুকরোটি কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলেন বাতাসে। অস্ফুটে আমি বললাম “এক গ্লাস জল দেবেন?”
আরও পড়ুনঃ স্বপ্ন পূরণ করার জন্য টাকা নয় সাহসের প্রয়োজন হয় | অনুপ্রেরণা গল্প
জল খেয়ে একটু ধাতস্থ হলাম। মনীমার দিকে তাকিয়ে বললাম “আমি আপনার দাদার ক্যারিয়ার নষ্ট করেছি এটা জানা সত্ত্বেও আমায় বাঁচালেন কেন?” আগের মতই মৃদু শান্ত স্বরে উনি বললেন “ক্যারিয়ার নষ্ট করেছেন। কিন্তু প্রাণে তো মারেন নি। দাদা আত্মহত্যা করেছিল। জানেন নিশ্চয়ই আত্মহত্যা মহাপাপ। সেই পাপে আজও প্রেতাত্মা হয়ে পরলোকে আটকে আছে। মুক্তি পায়নি। এই অবস্থায় ও যদি আপনাকে খুন করতো তাহলে আর কোনোদিন মুক্তি পেতোনা।” মনীমা একটু থামলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম “আপনি শুধু সকাল আটটা আর রাত নটায় কথা বলতেন কেন?” উনি বললেন, “আসলে এই ফোনটি এই প্ল্যানচেটের ঘরেই থাকতো। দাদা চায়নি প্ল্যানের বাইরে আমি আপনার সাথে বেশি কথা বলি। তাই দাদা যখন থাকতো, তখুনি কথা বলতাম।” আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম ওনার দিকে। উনি বললেন “আপনাকে মেসেজ করা, দেখা করতে বলা, প্ল্যানচেটের আহ্বান সবই দাদার প্ল্যান ছিল। কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম কিছু অঘটন ঘটতে পারে। তাই সতর্ক ছিলাম। প্রেতনির্বাপক ছড়িটা তাই টেবিলের নিচে লুকিয়ে রেখেছিলাম। সেটা দাদাও বুঝতে পারেনি।” আমি বললাম “ভবানী কি আবার ফিরে আসতে পারে?” উনি স্থির ভাবে বললেন “আবার যদি কেউ প্ল্যানচেটের মাধ্যমে ডাকে, তো আসতেই পারে।” আমি ভয়ার্ত স্বরে মনীমার একটা হাত ধরে জানতে চাইলাম “তাহলে আমার বাঁচার উপায়?” উনি মৃদু হেসে আমার হাতের উপর নিজের আর একটি হাত রাখলেন। অবনত চোখ। মুখে ঈষৎ লজ্জা। অদ্ভুত নিরবতা চারদিকে। বুঝতে পারছিলাম, মনামীই একমাত্র আমার রক্ষক হতে পারেন। লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম “আমি যদি এই হাত সারা জীবন ধরে রাখতে চাই! আপনি কি আপত্তি করবেন?” উনি মাথা নামিয়ে লাজুক স্বরে বললেন, “হাতটা ছাড়ুন।” আমি হাত ছাড়তেই উনি বললেন “আপনি না, খুব দুষ্টু।
✍️ অসীম